শীতে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়, তাই সেসময়ে পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যায় ভোগা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকে গরমকালেও পা ফাটার সমস্যার পরেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম কারণ শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব।
গরমের সময় বেশি ঘাম হওয়ায় শরীর থেকে অনেকটা পানি বেরিয়ে যায়। তাছাড়া, গ্রীষ্মকালে ডিহাইড্রেশনের সমস্যাও খুব বেশি হয়। গরমকালে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে দূষণও। ধুলো-ময়লা, দূষণের প্রভাবে গোড়ালি ফাটার সমস্যা বেশি করে দেখা যায়।
তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগে পা ফাটার সমস্যা কমতে পারে। জেনে নিন কী করবেন-
* স্ক্রাব: পায়ের গোড়ালি থেকে ময়লা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এ জন্য স্ক্রাবার দিয়ে গোড়ালি ঘষে ময়লা পরিষ্কার করুন। গোড়ালিতে লোশন ব্যবহার করুন, যা গোড়ালিকে ময়েশ্চারাইজ করে।
* মধু: মধু হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, যা ফাটা পা নিরাময়ে সাহায্য করে এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। হাফ গামলা গরম পানিতে এক কাপ মধু মিশিয়ে তাতে পা ডুবিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। এরপর আলতো করে স্ক্রাব করুন। পায়ের ত্বক কোমল হয়ে উঠবে।
* পেট্রোলিয়াম জেলি: ২০ মিনিটের জন্য হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন, তারপরে স্ক্রাবার দিয়ে গোড়ালি পরিষ্কার করুন। রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের গোড়ালিতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান। এতে গোড়ালির ফাটল কমে যাবে।
* চালের গুঁড়া: চালের গুঁড়া ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে, পাশাপাশি ত্বককে মসৃণ ও নরম করে তোলে। দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু এবং অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। যদি আপনার গোড়ালি খুবই শুষ্ক এবং ফাটল থাকে, তাহলে এই মিশ্রণে এক চা-চামচ অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলও মেশাতে পারেন। ১০ মিনিট গরম পানিতে পা ভিজিয়ে এই পেস্ট দিয়ে পায়ে আলতো করে স্ক্রাব করুন। এতে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে।
* অ্যালোভেরা: ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগে পা ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর অ্যালোভেরা জেল লাগান। এটি দ্রুত ফাটল পূরণ করতে সাহায্য করবে।
* পর্যাপ্ত পানি পান: ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলেই পা ফাটার সমস্যা দেখা যায়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পাশাপাশি জিঙ্ক, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ওমেগা-৩ এবং ভিটামিন বি৩ সমৃদ্ধ খাবার খান। খাদ্যতালিকায় বাদাম ও বীজ ব্যবহার করুন। এটি শরীরের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
* পা পরিষ্কার রাখুন: ধুলাবালি পায়ের বড় শত্রু। তাই বাইরে থেকে ফেরার পর পা ধুতে দেরি করবেন না। পায়ে ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার থেকেও বিরত থাকুন। পা ভেজা থাকা অবস্থায় পায়ে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লাগান। দিনের বেলা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করবেন না। কারণ এতে ধুলাবালি আটকানোর আশঙ্কা বেশি।
গ্লিসারিন ও গোলাপ জলের ফুট মাস্ক
পায়ের গোড়ালি ফাটা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে আপনি অনায়েসে এটি ফুট মাস্ক ব্যবহার করে দূর করতে পারেন।
পদ্ধতিঃ ফুট মাস্কের জন্য আপনার লাগবে লবন, লেবুর রস, গ্লিসারিন, গোলাপ জল ও কুসুম গরম পানি। একটি বড় পাত্রে ২ লিটার কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১ চা চামচ লবন, ১ টি গোটা লেবুর রস, ১ কাপ গোলাপ জল দিয়ে এতে পা ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর একটি মাজুনি কিংবা পেডিকিউরের পিউমিস স্টোন বা ঝামা ইট দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভালো করে ঘষে শক্ত, মোটা ও মরা চামড়া তুলে পা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ গ্লিসারিন ও ১ চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে পায়ে লাগান। এভাবে রেখে দিন পুরো রাত। একটু চিটচিটে লাগতে পারে। কিন্তু আপনাকে সহ্য করে নিতে হবে। সকালে উঠে কুসুম গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যাবহারে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই পা ফাটা গায়েব হয়ে যাবে।
নারকেল ও কলার ফুট মাস্ক
যদি পা ফাটা একটু বেশী খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তবে এই ফুট মাস্কটি আজকে থেকেই প্রতিদিন ব্যাবহার করার চেষ্টা করুন। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
পদ্ধতিঃ একটি কলা টুকরো করে নিন। এরপর তাজা ৩/৪ খণ্ড নারকেল নিন। দুটিতে একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি পায়ে লাগিয়ে নিন। বিশেষ করে ফাটা স্থানে ভালো করে লাগাবেন। শুকিয়ে উঠলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি হাতের কাছে তাজা নারকেল না পান তবে একটি কলা পিষে নিয়ে এতে ২/৩ চা চামচ নারকেল তেল দিয়ে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে লাগাতে পারেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।